ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয় ?
ক্যালসিয়াম শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। শরীরের দুর্বলতা থেকে শুরু করে শরীরে শক্তি যোগান এবং শরীর পরিচালনা পর্যন্ত ক্যালসিয়ামের ভূমিকা মুখ্য।
আজকে এই পোস্টে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো। তাই পুরো পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়বেন আশা করছি আপনাদের উপকারে আসবে।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয় ?
ক্যালসিয়াম প্রধানত আমাদের শরীরের বিভিন্ন গঠন মূলক কাজ করে থাকে। ক্যালসিয়াম আমাদের আমাদের শরীরের হাড় – মাংসপেশি বৃদ্ধি এবং গঠন করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটায়।
আমাদের শরীর যখন দুর্বল হয়ে পরে তখন আমাদের বুঝতে হবে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে। সুতরাং ক্যালসিয়াম আমাদের দেহ গঠন থেকে শুরু করে দেহ পরিচালনা পর্যন্ত প্রধান উপাদান গুলোর একটি।
এখন সকলের মাথায় একটি পশ্ন ঘুরপাক খেতে দেখা যায় তাহলো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয় বা ক্যালসিয়ামের যেকোনো ঔষধ খেয়ে মোটা হওয়া যায়। আপনি যদি খেয়াল করেন যে প্রাকৃতিক উপায় আপনার শরীর মোটা হচ্ছে না।
এইক্ষেত্রে মোটা হওয়ার অনেক ঔষধ রয়েছে। তবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আপনি যদি মোটা হতে চান সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে অনেক সমস্যা হতে পারে। ঔষধ সেবন করে মোটা হওয়ার কারনে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় শরীরে পানি এসে যায়।
যার ফলে তার জীবন অনেক ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। তবে আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমান মতো মোটা হওয়ার ঔষধ সেবন করেন তাহলে আপনার শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিবে না। মোটা হওয়ার জন্য ক্যালসিয়াম কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না।
আপনি যদি ভাবেন যে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে মোটা হবেন তাহলে এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত । ক্যালসিয়াম শরীরের শক্তি যোগান , হাড় গঠন এবং পেশী বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তবে আপনি যদি ভাবেন সরাসরি ক্যাসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করে মোটা হবেন তা একেবারেই ভুল ভাবনা। আমি আগেও বলেছি ক্যালসিয়াম শরীরের বিভিন্ন গঠন মূলক কাজে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে থাকে।
যেমন ধরুন আপনি কোনো ভাবে একটা ইঞ্জুরিতে পরে গেলে এবং আপনার শরীরের একটি হাড় ভেঙে গেলে সে সময় ডাক্তার আপনাকে প্রধান ঔষধ হিসেবে এই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করতে বলবে।
কেননা এই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট আপনার ভাঙা হড়কে জোড়া লাগা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে নিয়মিত পরিমান মতো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করার ফলে আপনার চেহারার বিভিন্ন পরিবর্তন হবে।
যেমন আপনার শরীরে একটি স্মুথ ভাব চলে আসবে। শরীর অনেক কোমল দেখাবে। তবে তা সেবন করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি সেবন করতে হবে।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা।
আমাদের শরীরের ৯৯% ক্যালসিয়ামই শরীরের অস্থি বা হাড়ের মধ্যে থাকে। এই ক্যালসিয়াম শুধু মাত্র যে আমাদের শরীরের হাড়ের গঠনে সহযোগিতা করে না নয়। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অন্যান্য যে সমস্ত উপকার গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ( Blood Cuagulation ) অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধা। আমাদের শরীর অনেক সময় দেখা যায় নানা রকমের আঘাত পাওয়ার ফলে কেটে যায় এবং তা থেকে রক্তক্ষরন হতে থাকে। এবং যে মাধ্যমে শরীরের এই রক্তক্ষরন বন্ধ হয় তাকেই বলা ( Blood Cuagulation )।
এই রক্তক্ষরন বন্ধ হওয়ার জন্য আমাদের শরীরের কতোগুলো ব্যাপার রয়েছে। এই ব্যাপার গুলোর মাধ্যমে আমাদের শরীরে একটি চেইন রিয়াকশন ঘটে আর এই চেইন রিয়াকশন ঘটার ফলে আমাদের শরীরে ক্লডফরমেশন হয়। আর এই ক্লডফরমেশন এর মাধ্যমে আমাদের শরীরের যে রক্তক্ষরণ হতে থাকে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এই যে ব্যাপার গুলো হয় তা আমাদের শরীরের লিভার বা যকৃৎ থেকে তৈরি হয়। তবে এই ব্যাপার গুলো সাধারণত সচল থাকে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম আয়ন না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি সচল হয় না।
যখন শরীরে ক্যালসিয়াম আয়ন আসে তখন এটি সচল হয় এবং একটি চেইন রিয়াকশন তৈরি করে। আর এই চেইন রিয়াকশন তৈরি হওয়ার কারনে আমাদের শরীরের রক্তের ক্লডফরমেশন হয়। আর তার কারনেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
এই ব্যাপারটি থেকে বুঝতে পেরেছি যে আমাদের শরীর থেকে যখন রক্তক্ষরণ হতে থাকে তখন তা বন্ধ করতে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
এরপর ক্যলসিয়াম আমাদের শরীরে যে উপকারটি করে তা হচ্ছে আমাদের শরীরের পেশীকে সংকোচিত করা। যদি আমাদের শরীরের পেশী সংকোচন না হয় তবে আমরা আমাদের শরীর নাড়াচাড়া করতে পারবো না।
এক কথায় বলতে গেলে পেশী সংকোচন না হলে হাটা চলা থেকে শুরু করে কোন ধরনের কাজ করতে পারবেন না। তাই আমাদের শরীরে যখন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় তখন আমাদের হাত পা ব্যাথা করতে শুরু করে, শরীর নাড়াচাড়া করতে অনেক সমস্যা হয়।
আমাদের শরীরের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যালসিয়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে কারন গুলোর জন্যে আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় তা ক্যালসিয়াম খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে।
এবং আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম আরও অনেক ছোট বড় গঠনমূলক কাজে অনেক উপকার করে থাকে।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম।
আমাদের শরীরে নানা রকম অনেক কারনেই অনেক ব্যাথা হতে পারে বা হাত পায়ে ব্যাথা করতে পারে। তবে এটি যে ক্যালসিয়ামের অভাবে হয়েছে তা কিন্তু নয়। এমন ব্যাথা হলে অনেকেই ভাবেন যে তার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে তাই এমন ব্যাথা করছে।
এবং সেটূ ভেবে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট বা সিরাপ তারা সেবন করে থাকে। এই কাজ গুলো একেবারেই করা যাবেনা। যদিও আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে প্রাকৃতিক ভাবে তা নিরুপায় করার অনেক মাধ্যম রয়েছে।
যেমন আপনি যে খাবার গুলো খান, আপনার প্রধান খাবার গুলোর মধ্যে ভাত একটি খাবার যাতে আপনার শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে। আপনি যদি তিন বেলা নিয়ম বেধে সময় মতো ভাত খান তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার শরীর থেকে ক্যালসিয়ামের অভাব একেবারেই কেটে যাবে।
আর যদি আপনি দেখেন যে কোন ভাবেই আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরন হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা সিরাপ সেবন করতে পারেন। তবে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির জন্য শরীরে একদিনে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের যোগান দেওয়া উচিত নয়।
এতে করে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের ফলে শরীরে অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। তাই একান্তই ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট বা সিরাপ সেবন করতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এবং আপনি সকালে এবং রাতে খাবার পরে একটি করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম।
একজন মেয়ে যখন গর্ভবতী হয় তখন তার শরীরে অনেক পুষ্টিকর উপাদানের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে অন্যতম একটি পুষ্টিকর উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আপনি গর্ভবতী হওয়ার পরে আপনার ভেতরে যে জীবনটি রয়েছে তাকে বেড়ে উঠার জন্য অনেক পুষ্টির দরকার।
সে সুবাদে একজন গর্ভবতী মায়ের তার অভ্যন্তরে থাকা জীবনটির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। একজন মেয়ে যখন গর্ভবতী হওয়ার প্রস্তুতি নিবে তখন তাকে গর্ভবতী হওয়ার বেশ কয়েকদিন পূর্বে থেকে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে হবে।
তার জন্য তাকে কয়েকদিন পূর্বে থেকে প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামযুক্ত ডায়েট করতে হবে। এবং ডাক্তারা এই পরামর্শ সকল গর্ভবতী মেয়েদের জন্য দিয়ে রেখেছে।
আপনি গর্ভবতী হওয়ার আগে পর্যন্ত পরিমান ক্যালসিয়াম গ্রহনের আপনার সন্তান অনেক পুষ্টি খুব সহজেই গ্রহন করতে পারবে। তবে অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের ফলে আপনার শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে হবে।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
আপনারা সকলেই জানেন একটি জিনিসের যেম ভালো দিক রয়েছে তেমনি তার খারাপ দিকও রয়েছে। ক্যালসিয়ামের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবনের পরে আপনার শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশি হয়ে যায় তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবল সম্ভবনা থাকে এবং বধহজমের মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মাফিক ক্যালসিয়াম ক্যাবলেট সেবন করেন তাহলে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিবে না।
বাচ্চাদের টোফেন সিরাপ এর কাজ কি ?
পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।