আমরা অনেকেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করার কিছুদিন পরই আমাদের আবেদন ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে চাই। কিন্তু কিভাবে যাচাই করতে হয় তা না জানার ফলে হয় কাছের কোন ই সার্ভিস দেয় এমন জায়গা থেকে সেবা নিচ্ছেন বা কিভাবে যাচাই করবেন তা না জেনে এর থেকে বিরত থাকছেন। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই নতুন নিয়ম ২০২৩।
বাংলাদেশে ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী সকলেরই জন্ম নিবন্ধন করা অত্যাবশ্যক হয়েছে এবং সকলেরই জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। বর্তমান সময়ে সেই জন্ম নিবন্ধনকে ডিজিটাল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন সবকিছু অনলাইন করতে হয়। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে গেলে নানা রকম ভুল হয়ে থাকে। ভুল গুলো আবার অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমেই সংশোধন করতে হয়।
নিচে আমরা ছবি সহ ধাপে ধাপে জেনে নিব কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে বেশ কয়েকটি কাগজপত্রের দরকার হয়। তবে তার মধ্যে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর ফটোকপি থাকলেই হবে। অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই এর জন্য আপনার জন্ম নিবন্ধন এর সনদটি লাগবে। জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমেই আপনি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই করতে পারবেন।
১। প্রথমে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর নাম্বারটি আপনার জানা থাকতে হবে। তার জন্য জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর একটি ফটোকপি বা জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি আপনার কাছে নিয়ে নিবেন। জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন যাচাই করতে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর নাম্বার লাগবে।
২। জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি সংগ্রহ করা হলে আপনাকে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে চলে যেতে হবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে। তার জন্য আপনি গুগল সার্চ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন https://everify.bdris.gov.bd/ টাইপ করা হয়ে গেলে সার্চ অপশনে ক্লিক করলেই আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই করার ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে।
এখানে প্রথম অপশনে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর যে নম্বরটি রয়েছে তা দিতে হবে। এখানে নির্ভুল ভাবে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি দিয়ে দিবেন। নম্বরটি দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন এখানে যাতে কোন প্রকার ভুল না হয়। কেননা নম্বরটি ভুল হলে তথ্য সাবমিট করার পর error দেখাবে। তাই সঠিকভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী নম্বরটি দিয়ে দিবেন।
জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি দেওয়া হয়ে গেলে পরবর্তী অপশনে জন্ম নিবন্ধন কারীর জন্ম তারিখটি দিতে হবে। এখানে অনেকেই ভুল করে ফেলে তারিখ, মাস এবং সাল দেওয়ার সময়। প্রথমে আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী জন্ম সালটি লিখতে হবে এর পর মাস এবং সবশেষে তারিখ দিতে হবে। অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী এদুটো তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে দিবেন।
পরবর্তী অপশনে বা The answer is এখানে উপরের দুটো সংখ্যা যোগ করলে যোগফল যত হবে তা দিয়ে দিবেন। সবকিছু পুনরায় আবার দেখে নিবেন সব ইনফরমেশন সঠিক ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা। সব ইনফরমেশন সঠিক ভাবে দেওয়া হয়ে গেলে সার্চ ওপশনে ক্লিক করবেন। ক্লিক করলে কয়েক সেকেন্ড পরে যদি আপনার উপরে দেওয়া সকল ইনফরমেশন সঠিক হয়ে থাকে তাহলে নিচের মতো একটি পেজ ওপেন হবে।
এখনে আপনি জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সকল ইনফরমেশন দেখতে পাবেন। তার মানে হচ্ছে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করা হয়েছে। যদি সার্চ অপশনে ক্লিক করার পর কোন পেজ ওপেন না হয়ে বা কোন রেজাল্ট না আসে এবং no record found লেখা আসে তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে নেই। এমতাবস্থায় আপনাকে পুনরায় আবার জন্ম নিবন্ধন কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
আর ক্লিক করার পরে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডের তথ্য দেখালে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি হয়ে গেছে। এবং আপনি এখান থেকে জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্ড ডাউনলোড করার উপায়।
জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন থেকে ডাউনলোড বা প্রিন্ট আউট করার জন্য আপনার কম্পিউটারের যে ব্রাউজার দিয়ে জন্ম নিবন্ধন এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন সে ব্রাউজারের মেনুতে যাবেন। আপনার কম্পিউটারের ডান পাশে কোনায় মেনু অপশনটি পেয়ে যাবেন সেখান থেকে প্রিন্ট অপশনটি বের করে ক্লিক করবেন ক্লিক করলে একটি পেজ ওপেন হবে সেখানে নিচে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করবেন। ক্লিক করলে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড টি প্রিন্ট আউট হবে।
যদি আপনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করে থাকেন তাহলে ফাইলটি ডাউনলোড করে পিডিএফ করে কোন প্রিন্ট আউট করে এমন সার্ভিস সেন্টার থেকে প্রিন্ট আউট করে নিবেন। উপরে দেখানো পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনারা জন্ম নিবন্ধন কার্ড সহজেই যাচাই করতে পারবেন।
শেষ পরামর্শ
আমরা সকলেই জানি যে বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের সকলের জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন অনলাইন না করা হলে আপনাকে বেশ অনেকগুলো সমস্যার মুখে পরতে হয়। জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার মানে হচ্ছে আপনার সমস্ত তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি খাতায় জমা রাখা হয়।
সকল দেশই যখন তাদের দেশের নাগরিকদের সকল তথ্য অনলাইন ডাটাবেইজের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ও তার ব্যাতিক্রম নয়। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও এখন সকলের জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করা অত্যাবশ্যক হয়েছে। যাদের বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার কার্ড হয়ে গেছে তাদের এটি অনলাইন না করলেও চলবে। তবে যাদের এখোনও জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার কার্ড করা হয়নি তাদেরকে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করে নিতে হবে।
যদি জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করা না থাকে তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি অবশ্যই অনলাইন করে নিতে হবে। যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করা না থাকে তাহলে আপনাকে অনেকগুলো রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। তাই পরামর্শ থাকবে যদি জন্ম নিবন্ধন কার্ড এখনও অনলাইন করা না হয়ে থাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করুন।
পড়ুন
জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করার নিয়ম।
আশা করছি জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে সংশোধন যাচাই কিভাবে করবেন তা বুঝাতে পেরেছি। এবং পোস্ট টি আপনাদের উপকারে আসবে।
জিজ্ঞেসা গুলো
জন্ম নিবন্ধন কার্ডের জন্য আবেদন করার কতো দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন এর কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন কার্ডের জন্য আবেদন করার পরে তা বেশি সময় নেয় না। তবে কিছু সময় দেখা যায় যে কোনো ধরনের বিড়ম্বনার কারনে একটু দেরি হতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে আবেদন করার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে আবেদন করার পরে জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম হয়ে গেলে আবেদন করার সময় যে নম্বর দিয়েছিলেন সে নম্বরের এসএমএস আসবে।
জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে সংশোধন যাচাই করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে সংশোধন যাচাই করতে হলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন কার্ডের যে ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি রয়েছে তা লাগবে। ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি কোন ভাবে না থাকলে অন্যথায় জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইনে সংশোধন যাচাই করা যাবে না।
পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।