দাউদ হলো একটি চর্মরোগ যা সাধারণত ছোট বড় সকল বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যেই দেখা দেয়। আমাদের শরীরে দাউদ৷ বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন সামান্য স্ক্রেচ বা ছিটকে বা ত্বকের সম্পর্কিত তাছাড়া আরও অন্যান্য কারণে হতে পারে। এই রোগটি আমাদের দেহে স্থায়ী না হলেও এটি আমাদের শরীরের স্কিনের বেশ ক্ষতি করে থাকে। তাই এই রোগটি হলে আমাদের বেশ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এই পোস্টে দাউদ কেন হয় এবং সবচেয়ে কার্যকরী দাউদ এর ঔষধ এর নাম তুলে ধরা হয়েছে। পুরো পোস্ট টি পড়বেন আশা করছি আপনাদের উপকারে আসবে।
দাউদ এর ঔষধ এর নাম এবং দাম।
দাউদ একটি সাধারণ অস্থায়ী রোগ হলেও দাউদের সঠিক চিকিৎসা না করলে তা আরো দ্রুত বাড়তে পারে। সাধারণত দাউদ থেকে বাঁচার উপায় হলো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া এবং সাবধান থাকা। সঠিক চিকিৎসা না করলে দাউদ একটি ছোট সমস্যা থেকে বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে এবং এটির প্রভাব শরীরে আরো জ্বলন্ত হয়ে উঠতে পারে।
দাউদের বেশ কিছু ধরন রয়েছে যেমন:
- ক্যান্ডিডা দাউদ।
- ক্রিমি দাউদ।
- জটিল দাউদ ইত্যাদি।
দাউদ হওয়ার বিভিন্ন কারন রয়েছে।
তার মধ্যে দাউদ হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারন গুলো হলো:
- বিভিন্ন ছত্রাকের কারনে শরীরে দাউদ হতে পারে।
- শরীরের কোনো স্থান সবসময় ভেজা থাকলে তা থেলে দাউদ হতে পারে।
- শরীর সবসময় অপরিষ্কার এবং অপরিচ্ছন্ন রাখলে দাউদ হতে পারে।
- কোনো দাউদ আক্রান্ত ব্যক্তির জামা কাপর ব্যবহার করলে দাউদ হতে পারে।
ইত্যাদি কারণ গুলোর জন্যই বেশিরভাগ সময়ই একজন মানুষ দাউদ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কোন লক্ষন গুলো দেখে আপনি বুঝবেন যে আপনার দাউদ হয়েছে। দাউদ হওয়ার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলো হলো:
- শরীরে এক ধরনের ক্ষত তৈরি হওয়া এবং এর আকার চাকার মতো হওয়া।
- ধীরে ধীরে চাকার মতো ক্ষত বড় হতে থাকা।
- চাকার মতে ক্ষত স্থানটি থেকে খুসকির মতো ময়লা পরতে থাকা।
- ক্ষত স্থানে স্বাভাবিকের তুলনার অতিরিক্ত চুলকানি তৈরি হওয়া।
- যে স্থানে দাউদ হবে সে স্থান থেকে সব লোম ঝরে যাওয়া।
ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার দাউদ হয়েছে কিনা।
শরীরের বেশ কিছু স্থান রয়েছে যে স্থান গুলোতে দাউদের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
স্থান গুলো হলো:
- পিঠ এবং পেটের মধ্যে দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
- পায়ের নিচে ও পায়ের পাতার মধ্যে দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
- হাত এবং পায়ের নখের মধ্যে দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
- মাথায় দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
- পায়ের দু রানের মধ্যে দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
- দাড়ির নিচেও দাউদ বেশি হয়ে থাকে।
ইত্যাদি জায়গা গুলোতেই দাউদের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
দাউদ কিভাবে ভালো হয় ?
অনেকের বিভিন্ন ক্ষত থেকে দাদ হয়ে থাকে । এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে খুব সংক্রামক ছড়াতে পারে। তাই দাউদ হলে আমরা তা নিরাময় করতে বিভিন্ন দাউদ এর ঔষধ এর নাম এবং দাউদ কিভাবে ভালো হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। কিন্তু বর্তমানে চিকিত্সকরা সুপারিশ করেছেন যে ঘন ঘন মলম এবং দামি ওষুধ দিয়ে দাদ চিকিত্সা করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।
চর্মরোগ ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে জিনগত পরিবর্তনের ফলে এই ছত্রাকটি সময়ের সাথে সাথে শরীরের কোষে তৈরি হয়েছে। দাউদের সংক্রমন বাড়ার ফলে বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ভোক্তাদের ওষুধ কেনার বুদ্ধিহীন অভ্যাসকে। আপনি কি জানেন যে দাউদের বেশ কিছু সহজ সরল ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে।
দাউদ রোগ ভালো করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
সাবান পানি দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
সাবান পানি আমাদের ত্বকে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। যা আমাদের ত্বকের ক্ষতস্থান অতি দ্রুত সারিয়ে তোলতে পারে । আপনি যদি প্রতিদিন ত্বকে দাউদ আক্রান্ত স্থান পানি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করেন। তাহলে দেখা যাবে ধীরে ধীরে দাউদ রোগটি সেরে যাচ্ছে।
নারকেল তেল দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
নারকেল তেলের মধ্যে মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল দুইটি বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান রয়েছে। যা দাউদের সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহায্য করে থাকে এবং এটি বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে ।
নারিকেল তেল ত্বকে লাগানোর জন্য প্রথমে একটি পাত্রের মধ্যে নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে । তারপর ওই গরম করা তেল আপনার ত্বকের দাউদ আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এই কাজটি দিনে দুই থেকে তিনবার প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
দাউদ হচ্ছে একটি ফাঙ্গাস জাতীয় রোগ। আর অ্যাপল সাইডার ভিনিগারের মধ্যে রয়েছে ফাঙ্গাসরোধী বেশ কয়েকটি উপাদান। যা আমাদের দেহের ফাঙ্গাসঘটিত বিভিন্ন জটিলতাকে সারিয়ে তুলতে সক্ষম ।
এটি দিনে তিন থেকে চারবার পরিষ্কার তুলার মধ্যে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার দিয়ে ত্বকের দাউদ আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। দাউদ ভালো হওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহার করুন।
টি-ট্রি অয়েল দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
ছত্রাকজনিত ত্বকের ইনফেকশনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে টি-ট্রি অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে। টি-ট্রি অয়েল দিয়ে দাউদের চিকিত্সা করতে হলে প্রথমে একটি পরিষ্কার তুলোর বলে কয়েক ফোঁটা টি-ট্রি অয়েল নিয়ে দেহের যেই জায়গায় সংক্রমিত হয়েছে সে স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে ।
টি-ট্রি অয়েল আপনারা নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন । এইভাবে ১দিনে সকাল এবং সন্ধায় ব্যবহার করুন।
হলুদ দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
হলুদ আমাদের ত্বকের বিভিন্ন রোগের চিকিত্সায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হলুদ আমাদের ত্বকে কার্যকরী অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে থাকে । এটি আমাদের ত্বকে সংক্রমণের বৃদ্ধিকে রোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে।
দাউদের চিকিত্সার জন্য প্রথমে কাচা হলুদ বাটা নিতে হবে এবং তাতে কিছুটা পানি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে । তারপর দেহের দাউদ সংক্রমিত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যালোভেরা দিয়ে দাউদ রোগের চিকিৎসা
আমাদের ত্বকে দাউদের সংক্রমণ রোধ করতে অ্যালোভেরা অত্যান্ত কার্যকরী হয়ে থাকে । অ্যালোভেরাতে থাকা উপকারী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে।
যা ত্বকের দাউদের চুলকানি এবং অস্বস্তি বোধ হওয়াকে প্রশমিত করতে সহায়তা করে। এটি দিয়ে দাউদের চিকিৎসা করার জন্য সংক্রমিত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দিতে হবে । দাউদ ভালো হওয়া পর্যন্ত এটি দিনে ৪ থেকে ৫ বার ব্যবহার করতে পারেন।
উপরের পদ্ধতি গুলো দাউদের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী। তাই যারা দাউদ রোগে আক্রান্ত তারা উপরের পদ্ধতি গুলোর যেকোনো একটি প্রয়োগ করতে পারেন আশা করছি উপকৃত হবেন।
দাউদের ক্রিম এর নাম এবং দাম।
আমরা কম বেশি সকলেই জানি যে দাউদ হলো একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এটি সাধারণত ত্বকের উপরিভাগে হয়ে থাকে এবং প্রচণ্ড চুলকায়। সময় মতো দাউদের চিকিৎসা না নিলে এটি শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে ত্বকের জটিল অবস্থা তৈরি করতে পারে।
এই রোগের সব চেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে এটি একটি ছোয়াচে রোগ। এর কারনে এই রোগটি হলে আপনাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং এটি চিকিৎসার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব নিরাময় করতে হবে। এটি নিরাময় করার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে ক্রীম। এখন আমরা জানবো দাউদ এর ঔষধ এর নাম এবং দাউদের ক্রিম এর নাম এবং দাম।
দাউদ নিরাময়ের কার্যকরী কয়েকটি ক্রীমের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো :
- Clotrim – ক্লোট্রিম।
- Fungidal – ফানজিডাল।
- Flugal – ফ্লুগাল।
- Econazole – ইকোনাজল।
- Miconazole – মাইকোনাজল।
এই ঔষধ গুলো দাউদ নিরাময়ে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। এই ক্রিম গুলো শুধু দাউদ নিরাময় নয় তার সাথে ত্বকের দাউদের কারনে হওয়া দাগও দূর হয়ে থাকে।
নিচে ক্রিম গুলোর দাম এবং ব্যবহার বিধি উল্লেখ করা হলো :
- Clotrim – ক্লোট্রিমঃ এই ক্রিমটি দাউদ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী একটি ক্রিম। এই ক্রিমটি এক দিনে তিন বার দাউদ আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। একাধারে ১৫ দিন এই ক্রিমটি ব্যবহার করতে হবে। এটি ছোট বড় সকেই ব্যবহার করতে পারবেন। এই ক্রিমটির মূল্য ৩৫ টাকা।
- Fungidal – ফানজিডালঃ ফানজিডাল এই ক্রিমটিও দাউদ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী একটি ক্রিম। এই ক্রিমটি দিনে একবার শুধু রাতের বেলা দাউদ আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। এই ক্রিমটিও একাধারে ১৫ ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এই ক্রিমটির মূল্য ৪০ টাকা।
- Flugal – ফ্লুগালঃ এই ক্রিমটিও দাউদ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী একটি ক্রিম। এটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দাউদ নিরাময় করার পাশাপাশি ত্বকের দাগও দূর করে থাকে। এই ক্রিমটি ১ দিনে একবার দুপুর বেলা ব্যবহার করতে হবে। এই ফ্লুগাল ক্রিমটিও একাধারে ১৫ দিন ব্যবহার করতে হবে। এই ক্রিমটির মূল্য ৫০ টাকা।
- Econazole – ইকোনাজলঃ ইকোনাজল ক্রিমটিও দাউদ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী ভুমিকা রাখে। বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দাউদ নিরাময় করার পাশাপাশি ত্বকের দাগও দূর করে থাকে। এই ক্রিমটি ১ দিনে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। ইকোনাজাল ক্রিমের মূল্য ৩৫ টাকা।
- Miconazole – মাইকোনাজলঃ এটি দাউদ এবং দাউদের চুলকানি খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর করতে পারে। এটি দাউদ নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী একটি করিম। এটি ১ দিনে একবার রাতে ব্যবহার করতে হবে। এই ক্রিমটি একাধারে ১০ থেকে ১৫ দিন ব্যবহার করতে হবে। এই ক্রিমটির মূল্য ৪০ টাকা।
আপনি দাউদ আক্রান্ত হলে উল্লেখিত ক্রিম গুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্রিম গুলো দাউদ খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিরাময় করতে সক্ষম ।